আমরা এর আগে অনলাইন শপের আইডিয়া কীভাবে পাব সেটা নিয়ে কথা বলেছি। শেষে একটা প্রশ্ন এসেছিল যে আইডিয়া পাওয়ার পর কী করব, দ্রুত একটা শপ খুলে বিক্রি শুরু করে দেব? এভাবে কি হয় বা অনলাইন শপ চালুর আগে করণীয় কী? কী কী কাজ করতে হবে?
অনলাইন শপ চালুর কাজগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়:
১. অফলাইনের কাজ
২. অনলাইনের কাজ
এই পর্বে শুধু অফলাইনের কাজগুলোর কথা বলব। প্রথমে তথ্য সংগ্রহ করতে হবে, গবেষণা করতে হবে। মাসের পর মাস গবেষণা করে, স্টাডি করে জ্ঞানের জাহাজ হয়ে নামতে বলি না। নিদেনপক্ষে নৌকা তো হবার প্রয়োজন, কিন্তু আমার পরিচিত মহলে বা চারপাশের লোকজনের মধ্যে এই প্রবণতাটা একেবারেই দেখি না।
প্রথমে গুগল ড্রাইভে একটা ডক ফাইল খুলে ফেলুন, শুরু হয়ে যাক Business Plan.
এর মধ্যে আপনি ঠিক করে ফেলেছেন কী পণ্য বিক্রি করবেন, বেশ কতগুলো প্রশ্নের উত্তর খোঁজার মাধমে এই পরিকল্পনা পূর্ণতা পাবে:
১. ক্রেতা কারা?
বয়স, নারী-পুরুষ-শিশু, এলাকা এসব ভিত্তিতে ক্রেতা টার্গেট করা যায়। তবে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হল এলাকা, শুধু নিজের উপজেলা ও আশেপাশের উপজেলায় বিক্রি করবেন নাকি সারা দেশ? ক্রেতা যদি নারীরা হন তবে এক রকম কৌশলে মার্কেটিং করতে হয়, আবার পুরুষের জন্য আরেক রকম। এমনকি শুধু বয়স্কদের জন্য পণ্য বাজারজাত করা যায়।
২. পণ্য কোথায় থেকে সংগ্রহ করবেন
যদি রিটেইলার হন তবে পণ্য কোথায় থেকে সংগ্রহ করবেন, আর উৎপাদক হলে কোথায় থেকে কাঁচামাল সংগ্রহ করবেন? একাধিক উৎস সন্ধান করতে হবে। ভিন্ন ভিন্ন উৎসে ভিন্ন ভিন্ন মূল্য, মানের পণ্য পাওয়া যায়। অর্থাৎ পাইকারি মূল্য কেমন, কোথায় কমে পাওয়া যায়, কোথায় ব্যতিক্রমর্ধী পাওয়া যায়? এজন্য অনলাইনে ও সরাসরি যোগাযোগ করতে হতে পারে।
৩. পণ্য কীভাবে আপনার বাড়ীতে বা স্টোরে আনবেন?
উৎপাদক বা বাইকারের কাছ থেকে কীভাবে নিজের স্টকে আনবেন, পরিবহন কী হবে? পরিবহণ ভাড়া বা কুরিয়ার খরচ কেমন হবে?
৪. কোথায় রাখবেন
পণ্য কোথায় রাখবেন ও তার ব্যবস্থা করতে হবে।
৫. কীভাবে ডেলিভারি করবেন?
উপযুক্ত সবগুলো ডেলিভারি প্রতিষ্ঠান, তাদের সেবার মান ও খরচ সমন্ধে স্পষ্ট তথ্য সংগ্রহ করবেন।
৬. প্রতিদ্বন্দ্বীদের অবস্থা কী?
এটা হল গবেষণার আসল যায়গা, এখানে আপনাকে একটু সময় ও মনযোগ দিতে হবে।
- আরও কয়জন বা কয়টি অনলাইন শপ এই পণ্য বিক্রি করছে?
- তাদের পণ্যের মান কেমন?
- দাম কেমন রাখে?
- তারা কীভাবে বিক্রি করে, গ্রুপে, পেজে, ওয়েবসাইটে?
- বিক্রির পরিমান সমন্ধেও ধারণা নেবার চেষ্টা করবেন।
এই সব তথ্য আপনার ব্যবাসায়ের প্রকৃতি, কৌশল, পণ্যের ধরণ বাছাই, মূল্য নির্ধারণ এসব বিষয়ের ক্ষেত্রে বিবেচনায় নিতে হবে।
৭. প্যাকেজিং কীভাবে করবেন
প্যাকেট ডিজাইন, কোথায় থেকে করবেন, খরচ কেমন হবে? পণ্যের প্রথম চালান হাতে আসার পর প্যাকেট তৈরি করলে ভাল হয়। অন্যরা কেমন প্যাকেট করছে সেটাও জানা দরকার। তবে প্যাকেট তৈরি করবেন বিক্রি শুরু করার ঠিক আগে, অন্যসব কাজ শেষ করার পর। মূল্য নির্ধারণের সময় প্যাকেজিঙের খরচ বিবেচনায় নিতে হয়।
৮. মূল্য নির্ধারণ
এটা সবচে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। অনলাইন শপ চালুর আগে বুঝা যায় না কীভাবে কী কী খাতে খরচ হতে পারে। এ কারণে অনেক সময়ই মূল্য নির্ধারণে ভুল হয়ে যায়। এজন্য যাবতীয় খরচ, সম্ভাব্য খরচ, প্রতিদ্বন্দ্বীদের মূল্য এসব বিবেচনায় নিয়ে মূল্য নির্ধারণ করতে হবে। শুরুতে নির্ধারিত মূল্যকে “অফার প্রাইস” হিসেবে প্রচার করতে পারেন, পরে ভাব বুঝে বাড়ানো বা কমানো সুযোগ থাকে।
৯. প্রচার কীভাবে করবেন?
প্রচারের অনেগুলো মাধ্যম আছে, দুটো ভাগে ভাগ করা যায়: পেইড মার্কেটিং (টাকা খরচ করে প্রচার), অর্গানিক মার্কেটিং (টাকা খরচ না করে প্রচার)। এই বিষয়টি লাভ বা মূল্য নির্ধারণের প্রভাব ফেলবে। পেইড মার্কেটিঙের মধ্যে আছে ফেসবুক ও গুগল এডওয়ার্ড সহ অন্যান্য শোশ্যাল মিডিয়ায় প্রমোশন করা। টাকা খরচ না করে কমুনিটি ডেভেলপ করে মার্কেটিং করা যায়। আবার দুটোর সমন্বয়ে মার্কেটিং করা যায়, এই পদ্ধতিটাই উত্তম।
১০. ট্রেড লাইসেন্স
অনলাইন শপের জন্য প্রথমেই ট্রেড লাইসেন্স করার দরকার নেই, প্রথমে ব্যবসায়টাকে দাঁড় করানো দরকার, এর পর লাইসেন্স করে নেয়া ভাল। বর্তমানে অনলাইন ব্যবসায়কে আলাদা করে নিবন্ধন করতে হয়। তবে ফিজিক্যাল দোকান হলে শুরুতেই লাইসেন্স করতে হবে।
অনলাইন শপ চালুর আগের করণীয় এইসব বিষয় ঠিক হবার পর শুরু করবেন অনলাইনের কাজ। যারা অনলাইনে ব্যবসায় করবেন না তাদের জন্য এই পর্যন্ত একই প্রক্রিয়া।