ইনবক্সে আসুন! ফেসবুক ভিত্তিক অনলাইন শপগুলোর একটা সুপরিচিত আহ্বান। পেজ থেকে কোনো পণ্যের ছবি শেয়ার করা হয়েছে, কিন্তু মূল্য উল্লেখ করা হয় নি। তখন আগ্রহী ব্যক্তিরা দাম জানতে চেয়ে মন্তব্য করেন। উত্তর আসে, “ইনবক্সে আসুন”। এটা করোনা ভাইরাস প্রকোপের সময় থেকেই বিতর্কিত একটি বিষয়। ওই সময় ফেসবুক ভিত্তিক অনলাইন শপগুলোর অভানীয় প্রসার ঘটে। সেই সময় ফেসবুক পেজ ও তার পাশাপাশি গ্রুপ ভিত্তিক অনলাইন বাজার তৈরি হয় হাজারে হাজারে। সেই সব পেজ আর গ্রুপগুলোতে পণ্যের মূল্য উল্লেখ না করে ইনবক্সে নক করতে বলা হত। ক্রেতারা প্রায়শই বিরক্ত হতেন, কিন্তু বিক্রেতাদেরও রয়েছে কিছু যুক্তি।
যে কারণে ইনবক্সে আসুন বলা হয়ে থাকে
১. এর পেছনে প্রধান যুক্তি হল প্রতিদ্বন্দ্বী অনলাইন শপগুলো মন্তব্যকারী ক্রেতাদের মেসেজ দিয়ে আরও কম মূল্যে পণ্য অফার করে ক্রেতা নিয়ে যায়। এই যুক্তির কিছুটা ভিত্তি আছে, দেশের অনলাইন মার্কেটে এমন ঘটনা ঘটেছে।
২. প্রতিদ্বন্দ্বী শপগুলো পণ্যমূল্য জেনে যায় তাই তারা এর ভিত্তিতে নিজেদের পণ্যের মূল্য নির্ধারণে তথ্যগত সুবিধা পায়।
৩. মূল্য উল্লেখ করা না থাকলে আগ্রহীরা মন্তব্য করে মূল্য জানতে চায়, এতে মন্তব্য বেশি পড়ে, পেজের এনগেজমেন্ট বাড়ে।
৪. ইনবক্সে এলে ক্রেতার সাথে আলোচনা হয়, ক্রেতাকে বুঝিয়ে কিনতে রাজি করানো সহজ হয়।
যুক্তি বিশ্লেষণ:
১. প্রথম সমস্যাটি আংশিক সমস্যা। প্রতিদ্বন্দ্বী শপগুলো সেই সব সম্ভাব্য ক্রেতাকে নক করতে পারে যারা পোস্টে মন্তব্য করে। মন্তব্য না করলে কোনো ক্রেতাকে মেসেজ দেবার সুযোগ থাকে না অন্য শপগুলোর। আর যেহেতু মূল্য ও অন্যান্য তথ্য পোস্টে উল্লেখ করা হয়েছে তাই সম্ভাব্য ক্রেতাদের অনেকেই সরাসরি পেজে মেসেজ দিয়ে অর্ডার করে, তার মন্তব্য করার দরকার হয় না। তবু কিছু ক্রেতা মন্তব্য করে, অন্য পেজগুলোর শুধু ওই ক্রেতাদের নক করার সুযোগ তৈরি হয়। আর এই মন্তব্যকারীদের সবাই কিন্তু পটেনশিয়াল ক্রেতা না। তাই মোট ক্রেতার খুব ছোট একটা অংশকেই হারানোর আশংকা থাকে।
২. প্রতিদ্বন্দ্বী শপ যদি মূল্য জানতে চায় তবে মূল্য গোপন রাখা যায় না। তারা ক্রেতা সেজে ইনবক্সে এসে সহজেই মূল্য জেনে নিতে পারে।
৩. মূল্য জানতে চেয়ে মন্তব্য করলে কিছু এনগেজমেন্ট বাড়ে সত্য তবে এর নেতিবাচক দিকের চেয়ে সেটি বেশি ফলদায়ক কিনা তা বিবেচ্য। তবে এনগেজমেন্ট বাড়ানোর জন্য নিয়মিত ভাল ভাল পোস্ট দেয়া যেতে পারে, সেগুলো শুধু সেল পোস্ট হবে না। বিশেষজ্ঞরা ২০% সেল পোস্ট ও বাকি ৮০% তথ্যভিত্তিক পোস্ট, প্রশ্ন, আলোচনা ইত্যাদির মাধ্যমে এনগেজমেন্ট কার্যকরীভাবে বাড়তে পারে।
৪. ইনবক্সে তো ক্রেতাকে যেতেই হবে, অর্ডার ক্রেতা ইনবক্সেই দেবেন। মূল্য উল্লেখ করা হলে ক্রেতা যদি আগ্রহী হয় সে মেসেজ দেয়, অতি অল্প কিছু লোক মন্তব্য করে, তখন তাদের মেসেজ দিয়ে পেজগুলো যোগাযোগ করতে পারে। পন্যের বিবরণ, মূল্য এসব উল্লেখ করে এমনভাবে এনগেজিং পোস্ট লিখতে হবে যেন ক্রেতা মেসেজ দিতে আগ্রহী হয়।
মূল্য না উল্লেখ করার খারাপ দিকগুলো:
ক্রেতা আগ্রহ হারায়: প্রতিদিন অসংখ্য বিজ্ঞাপন আসে, তার মধ্যে অনেক প্রোডাক্টই আগ্রহ জাগায়, সবগুলো ধরে ধরে তো দাম জিজ্ঞেস করা যায় না। যেটার দাম দেখে আগহ হবে তখন কেনার জন্য মন্তব্য বা মেসেজ দেয়া যায়। মূল্য উল্লেখ না থাকলে অনেক ক্রেতাই বিজ্ঞাপন এড়িয়ে যান। কারণ মেসেজ দিয়ে বা মন্তব্য করে মূল্য জানতে বেশ সময় লাগে। অনেক সময় পেজও উত্তর দিতে দেরি করে।
পেশাদারিত্বের ঘাটতি: পেশাদার অনলাইন শপ হবে গোছানো, একজন ক্রেতা পেজে গিয়ে, পোস্ট দেখে, এবাউট সেকশন দেখে কনভিন্সড হবে, সেখানে সব তথ্যে দেয়া থাকবে। ক্রেতার ইতিবাচক ইম্প্রেশন পেতে মূল্য উল্লেখ থাকতে হবে।
পেজের বিশ্বস্ততা কমে: বিক্রেতা একেকজন ক্রেতার কাছে একেক রকম দাম অফার করে না সেটা ক্রেতা কিভাবে বুঝবেন! ক্রেতার মন বুঝে ভিন্ন ভিন্ন মূল্য অফার করার ঘটনা দেখা গিয়েছে তাই এতে বিক্রেতার প্রতি আস্থা কমে যায়। অনলাইন শপকে অফলাইন শপ থেকে কিছুটা ব্যতিক্রম হতে হবে।
প্রচুর অপ্রয়োজনীয় মেসেজ: বিক্রেতার জন্য খারাপ এজন্য যে প্রচুর মেসেজ আসবে শুধু মূল্য জিজ্ঞেস করে, এতে অনেক সময় ব্যয় হয়, যেখান থেকে বিক্রি হার খুব বেশি না। অপ্রয়োজনীয় মেসেজ দিয়ে ভরে যায় ইনবক্স। যারা মূল্য দেখার পরও আরও জানতে মেসেজ দেয় তারা হল পটেনশিয়াল ক্রেতা, এদের পেছনে সময় ব্যয় করলে লাভ আছে।
ই-কমার্সের বৈশিষ্ট্য হল Less Human Involvement, যত বেশি অটোমেটেড করা যায়। প্রাইস জানতে মেসেজ করা হলে এটা হল অনলাইন কম্যুনিকেশন, ই-কমার্স নয়।