ডলার আয় কেন করবেন? আমরা সারা বিশ্বে দেখতে পাচ্ছি বিভিন্ন দেশে ডলারের বিপরীতে স্থানীয় মূদ্রার মান কমে যাচ্ছে। এর ফলে আপনার হাতে যে টাকা আছে বা আপনি মাস গেলে যে টাকা আয় করেন তার মূল্য কমে যাচ্ছে, আগের চেয়ে কম দ্রব্য আপনি সেই টাকা দিয়ে কিনতে পারছেন। একই পরিমাণ টাকা থাকার পরও আপনি আগের চেয়ে দরিদ্র!
এর বদলে যদি আপনি ডলারেই আয় করতে পারেন? তাহলে টাকা বা রুপির মান কমে গেলেও আপনি দরিদ্র হবেন না। দেশের অর্থভাণ্ডারেও যোগ হবে বৈদেশিক মূদ্রা।
অর্থনীতি, মূদ্রাস্ফীতি এসব যদি কঠিন লাগে তবে একটা উপন্যাস পড়তে বলি। ১৯২৩ সাল, জার্মানীর একটা ছোট শহর, দুইটি বিশ্বযুদ্ধের মাঝের সময় জার্মানী ভয়াবহ মূদ্রাস্ফীতির কবলে পড়েছিল। তখন লাখ মার্কের নোট ছাপানো হয়েছিল। কর্মীদের বেতন দেয়া হত দিনে কয়েকবার, কারণ সকালে এক লাখ মার্ক দিয়ে যা কেনা যেত বিকেলে তা পাওয়া যেত না। দেশের মূদ্রাস্ফীতি পরিস্থিতি সেই জার্মানী বা হালের জিম্বাবুয়ের মত না, তেমন হবার আশংকাও নেই। তবু দ্রব্যমুল্যের উর্ধগতিতে টিকে থাকতে বৈদেশিক আয় ভাল সমাধান, কারণ বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়লে দরকারী জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যায় কিন্তু বেতন বাড়ে না।
উপন্যাসের নায়কেরা কাজ করেন ক্রুল কোম্পানি নামে একটা কবরফলকের দোকানে। এই সময় কোম্পানির দেনা শোধ করতে ২০০ ডলার লাগবে, তখন ২০০ ডলার মানে ২৫ কোটি মার্ক! কিন্তু লাগবে ২০০ ডলারই, সময় মাত্র সাত দিন। তখন তো অনলাইনে আয়ের উপায় ছিল না তবু কীভাবে দুইশত ডলার তারা জোগাড় করে দেনা শোধ করে কোম্পানি টিকিয়ে রাখবে? সেটা জানতে বইটি পড়ে নিতে পারেন আর মূদ্রাস্ফীতি কাকে বলে হাতে কলমে শিখতে পারবেন। বইটির নাম দ্য ব্ল্যাক অবিলিস্ক, লিখেছেন এরিক মারিয়া রেমার্ক।
অনলাইনে আয় করলেই ডলার আয় হয় না। যদি দেশের ভেতরে পন্য বিক্রি করেন বা সেবাদান করে আয় করেন তবে সেটা আপনি টাকাতেই মূল্য পাবেন, দেশের টাকা দেশের ভেতরে প্রবাহিত হল। কিন্তু যদি পণ্য বিদেশে বিক্রি করেন বা বিদেশে সেবাদান করেন তবে তার বিনিয়মে ডালার আয় করতে পারবেন। বিদেশ থেকে দেশে ডলার আসবে। তাই এই তালিকায় এমন কিছু উপায় উল্লেখ করছি যেগুলোর মাধ্যমে বিদেশ থেকে আয় করা যাবে।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল ডলার আয় করা মানে স্ক্যামের মাধ্যমে আয় নয়, বা ক্লিক করে আয় করা নয়, এসব থেকে দূরে থাকবেন।
বৈদেশিক মূদ্রা সেটা ডলার হোক বা অন্য কোনো মূদ্রা আয়ের দুটো উপায় আছে, এক. অফলাইনে, কোনো কিছু রপ্তানির মধ্যমে, দুই. অনলাইন। রপ্তানি বিষয়ে সবাই জানেন। তবে আপনি যদি সুযোগ পান তবে বিদেশী কোনো ই-কমার্স সাইটের মাধ্যমে বিদেশে পণ্য বিক্রি করে ডলার আয় করতে পারেন যেমন এ্যামাজন.কম, পাইকারি হলে আলিবাবা.কম।
অনলাইন জিনিসটাই যেহেতু তথ্য-প্রযুক্তির নির্ভর তাই তথ্য-প্রযুক্তির সাথে জড়িত বা দক্ষদের এখানে সুযোগ বেশি। যেমন গ্রাফিক ডিজাইন, ভিডিও এডিটিং, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, এ্যাপ ডেভেলপমেন্ট, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট যারা জানেন তাদের জন্য কাজের বিশাল সুযোগ আছে অনলাইনে, ফ্রিল্যান্সিং সাইট গুলোর মাধ্যমে। একই সাথে এগুলো আইটির কাজ আবার ফ্রিল্যান্সিঙেরও। তবে আমরা ফ্রিল্যান্সিং ও আইটির বাইরে আরও কী কী উপায়ে ডলার আয় করা যায় সেগুলো খুঁজব।
ডলার আয় করার উপায়:
১. ব্লগিং
অনলাইনে টাকা আয় করার উপায় বললেই প্রথমে মাথায় আসে ব্লগিং, কারো কাছে পরামর্শ চাইলেও প্রথমে বলবে ব্লগিং করতে। কিন্তু অনেকের পরিষ্কার ধারণা নেই ব্লগিং থেকে কিভাবে আয় করে। সহজ কথায় ব্লগিং হল মানুষের কাজে লাগে এমন বিষয়ে লেখালেখি করা। এক্ষেত্রে প্রথমে লক্ষ্য থাকে এডসেন্স তথা গুগলের দেয়া বিজ্ঞাপন থেকে আয় করা।
এডসেন্স থেকে ভাল পরিমাণে আয় করা সহজ না, বা দ্রুত আয় হয় না। তাই কেউ ব্লগিং করতে চাইলে পড়ালেখা শেষ হবার আগেই শুরু করা উচিৎ কারণ এখান থেকে জীবন ধারণ করার মত ফসল আসতে সময় লাগে, অভিজ্ঞতা লাগে, দক্ষতা লাগে। লাগে ইংরেজির উপর ভাল দখল, লিখতে পারার ক্ষমতা।
এছাড়া এফিলিয়েট মার্কেটিঙের একটা মাধ্যম ব্লগিং। আবার ফ্রিল্যান্সিং সাইটগুলোর মাধ্যমে অন্যের ওয়েবসাইটে লিখেও আয় করা যায়।
২. এফিলিয়েট মার্কেটিং
এফিলিয়েট মার্কেটিং হল অন্যের জন্য মার্কেটিং করা, বা অন্যকে বেচতে সহায়তা করা। আমাদের দেশে অনলাইনে এফিলিয়েট মার্কেটিং একেবারেই অবহেলিত বিষয়, তাই সহজে একন নবিশ এফিলিয়েট মার্কেটিং কী বুঝতে পারেন না, কিন্তু বাস্তব জীবনে চারপাশে এফিলিয়েট মার্কেটিং খুব চর্চা হয়।
যেমন আপনি সিলেটে গিয়েছেন ট্রেনে করে, রিক্সায় করে হোটেল খুজতে বেরুলেন, রিক্সাওয়ালা আপনাকে কোনো একটা হোটেলের সামনে নিয়ে থামাল, আপনাকে সেখানে থাকতে পরামর্শ দিবে, রিক্সাওয়ালা ওই হোটেল থেকে কমিশন পাবে যদি আপনি সেখানে থাকেন। আন্তঃজেলা বাসগুলো যেকোনো রেস্তোরার সামনে বিরতি দেয় না। নির্দিষ্ট কিছু রেস্তোরায় বিরতি দেয়, ওই রেস্তোরাগুলো থেকে বাসমালিক কমিশন পায়। এগুলো এফিলিয়েট মার্কেটিঙের সহজ উদাহরণ।
এফিলিয়েট মার্কেটিঙে কথা আসলে প্রথমেই মাথায় আসে এ্যামাজন এফিলিয়েটিং, মানে আপনার মাধ্যমে এ্যামাজনের পণ্য বিক্রি করে কমিশন পাওয়া। বাংলাদেশের ই-কমার্স সেক্টর এখন বেশ বড় তবু এখানে এফিলিয়েটিং চর্চা দেখা যায় না, অথচ সরাসরি মার্কেটিঙের চেয়ে এফিলিয়েট মার্কেটিঙ ক্রেতার আস্থা অর্জন করে দ্রুততর। আপনি বাংলাদেশে বা পশ্চিম বঙ্গে বসেই ইংরেজিতে লেখালেখি করে এ্যামাজনের পন্য বিক্রিতে সহায়তা করে আয় করতে পারেন। দারাজের এফিলিয়েট মার্কেটিং প্রোগ্রাম আছে বটে তবে এখনও জনপ্রিয়তা পায় নি, আপনি চেষ্টা করতে পারেন।
৩. ছবি বিক্রি
এটি আমাদের দেশে এখনও কম জনপ্রিয় আয়ের মাধ্যম। বেশিরভাগ লোক শখের বশে ছবি তোলে। এই শখকে পেশায় রুপান্তর করা যায়। বেশ কিছু মার্কেটপ্লেস আছে যেখানে ছবি বিক্রি করে কমিশন আয় করা যায়, যেমন শাটারস্টক, এডোব স্টক, গেটি ইমেজেস, Alamy, 500px, । যে কোনো ছবিই বিক্রি হয় না, ছবিকে হবে সর্বোচ্চ টেকনিক্যালি খুতমুক্ত, ক্রেতার কাজে লাগবে এমন ছবি। এজন্য গবেষণা করতে হবে কোন ধরণের ছবি বিক্রি হয়। তবে বাংলাদেশে বসে বিদেশের বাজার উপযোগী ছবি তোলাও একটা চ্যালেঞ্জ, আপনি এই চ্যালেঞ্জটি নিয়ে বিদেশ থেকে ডলার আয় করতে পারেন।
৪. ফ্রিল্যান্সিং
ফ্রিল্যান্সিঙের অনেকগুলো ক্ষেত্র আছে, ফৃল্যান্সিং সাইটগুলো ঘেটে দেখতে পারেন, যেমন ফ্রিল্যান্সার.কম, আপওয়ার্ক, 99designs, DesignCrowd, PeoplePerHour. এসইও, অন্যের জন্য এফিলিয়েট মার্কেটিং, অনুবাদ করা, আর্টিকেল লেখা, কপিরাইটিং, ইঞ্জিনিয়ারিং ডিজাইন, গয়না ডিজাইন ইত্যাদি সহ অনেক অনেক ধরণের কাজ আছে অনলাইনে।
বিজনেস গ্র্যাজুয়েটদের জন্য: বিবিএ, এমবিএ বা ডিজিটাল মার্কেটিং, এডমিন ও কাস্টমার সাপোর্ট, স্টক ম্যানেজমেন্ট, একাউন্টিং টাইপ কাজও অনলাইনে করে দিতে পারেন, এগুলো যে ফ্রিল্যান্সিঙের মাধ্যমে করা যেতে পারে সেটাই অনেকে জানেন না। দেশে বিপুল সংখ্যক একাউন্টস-ফিন্যান্স গ্র্যাজুয়েট বেকার হয়ে আছেন, তারা চাকুরির বিকল্প হিসেবে ফ্রিল্যান্সিং করতে পারেন। তবে সেজন্য তাদের আরও কিছু স্টাডি করতে হবে অনলাইনে কিভাবে এই কাজগুলো করে দেয়া যেতে পারে সেটা জানতে।
ডিজাইন ও ক্রিয়েটিভ: এটা সবচে সুপরিচিত ফ্রিল্যান্সিং ক্ষেত্র, দেশের ফ্রিল্যান্সাদের বড় একটি অংশ গ্রাফিক ডিজাইন, লোগো ডিজাইন, ছবি এডিটিং করে আয় করে।
আইনজীবিদের জন্য: অনেকেই জানে না লিগ্যাল সেবা দিয়েও বিদেশ থেকে আয় করা যেতে পারে।
ইঞ্জিনিয়ার ও আর্কিটেক্টদের জন্য: ফ্রিল্যান্সার.কম ও আপওয়ার্ক.কম এ ইঞ্জিনিয়ার ও আর্কিটেক্টদের জন্য কাজ আছে।
লেখালেখি ও অনুবাদ: যদি বাংলা ছাড়া অন্য ভাষায় আপনার উচ্চ পর্যায়ের দক্ষতা থাকে যেমন ইংরেজি, আরবি বা অন্য কোনো ভাষায় তবে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কন্টেন্ট অনুবাদ করতে পারেন।
ডাটা এন্ট্রিকে বলা যেতে পারে সবচে’ পরিচিত ফ্রিল্যান্সিং কাজ।
এছাড়া আইটি এক্সপার্টদের জন্য অসংখ্য ক্ষেত্র রয়েছে বৈদেশিক মূদ্রা বা ডলার আয় করার জন্য।
৫. ডোমেইন বিজনেস
ডোমেইন ব্যবসায় বলতে ডোমেইন রিসেল বুঝিয়েছি। ৪টি ইংরেজি অক্ষর দিয়ে বানানো সম্ভব এমন সমস্ত ডোমেইন বিক্রি হয়ে গিয়েছে। এমনকি ৫ ও ৬ অক্ষরেও ডোমেইন পাওয়া মুশকিল। তাই অনেকেই এখন ডোমেইনের জন্য সেকেন্ডারি মার্কেটে খুঁজতে যায়। তবে আপনি ডোমেইন কিনবেন ভবিষ্যতের জন্য।
এমন ডোমেইনের আইডিয়া বের করবেন যা আগামিতে বা এমনকি এখনই চাহিদা হতে পারে। আপনার বের করা একটা চমৎকার ডোমেইন আইডিয়া অন্যের জন্য আদর্শ হতে পারে।
namecheap.com বা GoDaddy.com থেকে মাত্র ১২ ডলারে এমনকি অফারে ১ ডলারেও কিনতে পারেন। কম দামে কেনা ডোমেইন হাজার ডলারেও বিক্রি হতে পারে। ২০০৭ সালে VacationRentals.com ৩৫ মিলিয়ন ডলারে বিক্রি হয়েছিল! এমন অনেক ইতিহাস আছে।
কৌশলটি হল খালি আছে এমন নামগুলি খুঁজে বের করা যেগুলোর বাণিজ্যিক সম্ভাবনা আছে, ভবিষ্যতে চাহিদা সৃষ্টি হবে। তারপর Sedo.com এর মতো রিসেলিং সাইটে বিক্রয়ের জন্য তালিকাভুক্ত করুন৷ তবে এজন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও বাজেট থাকতে হবে।
টেকি টাস্ক:
৬. ওয়ার্ডপ্রেস থিম ও প্লাগিন ডেভেলপমেন্ট:
যদি ওয়ার্ডপ্রেস থিম ও প্লাগিন ডেভেলপ করতে পারেন তবে আপনার জন্য থিম ফরেস্ট দারুন যায়গা যেটি পৃথিবীর সবচে বড় থিম ও প্লাগিন মার্কেটপ্লেস।
৭. এ্যাপ ডেভেলপমেন্ট:
এ্যাপ বিক্রি করে বা অন্যের জন্য এ্যাপ ডেভেলপ করে আয় করা যায়, তবে সেটি বলছি না। মানুষের কাজে লাগে বা কোনো সমস্যা সমাধাণ করতে পারে এমন এ্যাপ ডেভেলপ করুন, গুগল প্লে তে আপলোড দিন। তারপর সেখান থেকে ইন-এ্যাপ পারচেজ বা বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আয় করুন।