ব্যবসায়ের উদ্যোগ নিতে গেলে বেশিরভাগ ব্যক্তিকে দেখা যায় কিসের ব্যবসায় করবেন সেটা ভেবে পান না। সত্য বলতে আমরা সঠিক পথে ভাবি না, তাই “আইডিয়া” খুঁজে পাই না। অনলাইনে ব্যবসায়ের সুযোগ উদ্যোগ গ্রহণকে সহজ করেছে, কিন্তু ব্যবসায় উদ্যোগের আইডিয়া খুঁজে পাবার পথ সহজ হয় নি।
ব্যবসায় উদ্যোগের আইডিয়া বের করার মূলত দুটো উপায় আছে-
১. অন্যকে অনুসরণ করা
২. নিজে নতুন কিছু করা
বাংলাদেশের ৯০% লোক প্রথম পদ্ধতিতে চলে। নতুন কিছু খুঁজে না পেয়ে, অথবা নতুন কিছু করার ঝুকিকে ভয় পেয়ে, অথবা কোনো উদ্যোগকে সম্ভবনাময় ভেবে সেটা অনুসরণ করে। এই অনুসরণের পরিমান যখন গণহারে হয় তখন তা “রক্তাক্ত সাগরে” পরিণত হয়। রক্তাক্ত সাগর হল যেখানে অনেক মাছ, একে অপরকে খেয়ে টিকে থাকে। অনলাইনে যেমন দেখা যায় সবাই শাড়ী, থ্রিপিস বা সরিষা তেল-মধু বিক্রি করছে। ঘুরেফিরে পরিচিত কিছু আইটেম, বা কেও কোনো একটা পণ্য নিয়ে ভাল করছে, তাকে দেখে দল বেধে অন্যরা সেখানে ঝাপিয়ে পড়ে।
অনলাইনে এলেই বুঝি সবাই একদিন জেফ বেজোস বা জ্যাক মা হয়ে যাবে। অনেকেই উদ্যোগ নিয়েছে, সফল হয়েছে কয়েকজন, বহু বেজোস বা জ্যাক মা পথের ধুলোয় হারিয়ে গেছে। আমরা শুধু জেনেছি সফলদের কথা।
তাহলে নিজে কিভাবে নতুন ব্যবসায় উদ্যোগের আইডিয়া বের করা যায়? এখানেও দুটো সহজ উপায় আছে-
১. অভাব অনুভব
২. নিজের দক্ষতা বা সুবিধাকে কাজে লাগানো
প্রথমে অভাব বোধ করতে হবে, উদ্যোক্তা নয় ভোক্তার যায়গা থেকে দেখতে হবে। কী নেই, কীসের প্রয়োজন, কী থাকলে জীবন যাপন সহজ হত, কী থাকলে সমস্যার সমাধান হত?
অভাব বা সমস্যা খুঁজে বের করতে পারলে আইডিয়া চলে আসবে। যেমন, হোম অফিসের দিনগুলোতে বুঝতে পেরেছি দোহারে কী নেই, কীসের ঘাটতি, অবশ্য অভাবগুলো আগে থেকে অনুভব করি, কিন্তু এই সময় সেগুলো প্রকট হয়ে দাড়িয়েছিল।
আইডিয়া যখন বের করতে পারবেন, সেটা শতভাগ নতুন নাও হতে পারে, হয়তো অন্য কোথাও আছে। আবার পুরোপুরি নতুন হতে পারে।
দ্বিতীয় উপায়, ধরা যাক কেও প্রচুর বই পড়ে, বইয়ের জগৎ সমন্ধে তার ব্যাপক জানাশোনা, এটা তার নেশা বা শখ থেকেই। তার জন্য বইয়ের ব্যবসায় একটা ভাল উপায় হতে পারে। কারো পারিবারিক ভাবে হার্ডওয়্যারের ব্যবসায়, সে হয়তো দোকানেও কখনো ঠিক মত বসে নি, কিন্তু পারিবারিক ব্যবসায়ের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে হার্ডওয়্যারের অনলাইন শপ খুলতে পারে। কেও ছোটবেলা থেকে শখের বসে নানান রকম হস্তকর্ম করে, সে হ্যান্ডিক্র্যাফ্টের অনলাইন শপ খুলতে পারে।
আরেকটা আছে আঞ্চলিক সুবিধা, যেমন কোনো এলাকায় কোনো বিশেষ পণ্য তৈরি হয়, বা কোনো কাঁচামাল প্রাকৃতিক ভাবে উৎপন্ন হয়। পন্যটা আগের মত চলে না, বা কাঁচামালকে পাইকারি বিক্রি করে দেয়া হয়। তখন বিশেষ পণ্যের অনলাইন শপ বা কাঁচামালকে পরিপূর্ণ পন্যে রুপান্তরের উদ্যোগ হতে পারে ভাল আইডিয়া। আমি সবসময় মানুষকে পরামর্শ দেই সে যা ভাল পারে বা যা ভাল বুঝে সেটা নিয়েই কিছু করা, এটা তার জন্য সহজ। যেমন ঢাকার দোহার ও নবাবগঞ্জে ভাল মানের হাতে বোনা তাঁতের লুঙ্গি তৈরি হয়, তাই সহজে কেউ তাঁতের লুঙ্গির অনলাইন শপ খুলতে পারে।
সম্পূর্ণ নতুন কিছু করাকেও নিরুৎসাহিত করি না বরং বেশি উৎসাহিত করি। তবে যেটাই করুক তার জন্য কিছু পূর্বপ্রস্তুতি আছে।
একটা জরুরি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে যে ব্যবসায় উদ্যোগের আইডিয়া নিয়েই আগান না কেন সেটায় যেন কোনো না কোনো অনন্যতা থাকে, মানে আপনার ব্যবসায়কে অন্যের চেয়ে আলাদা করা। সহজ কথায় কেন অন্যের কাছ থেকে না কিনে আপনার কাছ থেকে কিনবে সেটা নির্ধারণ ও বাস্তবায়ন করা, যাকে ইংরেজিতে বলে ইউনিক সেলিং পয়েন্ট।
ব্যবসায় উদ্যোগের আইডিয়া পাওয়া গেল, তখন কী করবেন? আজকে আইডিয়া বের করলেন, কাল দোকান বা সেবা কেন্দ্র খুললেন, পরশুদিন বেচা বিক্রি শুরু হয়ে গেল, ব্যাপারটা কি এমন? এমন না হলে শুরু আগে কী করতে হবে? ব্যবসায় উদ্যোগের আইডিয়া কীভাবে বাস্তবায়ন করবেন?