আমরা এর আগে কথা বলেছিলাম অনলাইন শপ চালু করার প্রক্রিয়া বা চালুর আগের কাজগুলো নিয়ে। কাজগুলোকে দুইভাগে ভাগ করেছিলাম – অফলাইনের কাজ, এর পর অনলাইনের কাজ, এই দুইয়ের মাঝে অনলাইন শপের নাম ও লোগো তৈরি করে ফেলতে হবে।
এই দুটো ঠিক না হলে প্যাকেট তৈরি ও ট্রেড লাইসেন্স করা যাবে না। তবে প্রথমেই প্যাকেট তৈরি ও ট্রেড লাইসেন্স করা ঠিক হবে না। প্রথম দিকে ব্র্যান্ডেড প্যাকেট না করে বাজার থেকে ভাল মানের পৃন্ট ছাড়া প্যাকেট কিনে কাজ চালানো ভাল, এতে খরচ কমে।
ব্যবসায়কে ব্র্যান্ডেড করতে নাম ও লোগো জরুরি। ব্যবসায়ের জন্য ব্যক্তির পরচিতির দরকার আছে কিন্তু ব্যক্তির চেয়ে ব্যবসায়কে এগিয়ে রাখতে হবে। কেন, তা আরেকদিন বলব।
অনলাইন শপের নাম ও লোগো কেমন হবে?
এ নিয়ে অনেক কথা বলা যায়, অনেক গভীর আলোচনা করা যায়। নামকরণের অনেক অনেক ক্রাইটেরিয়া আছে। কিন্তু আমরা নামকরণের জন্য অত গভীরে যাব না। শুধু টেকনিক্যাল দিকটাই দেখব। অনেকে নাম ঠিক করতে করতে অনেক সময় ব্যয় করে ফেলে। তাদের বলি যেকোনো নামকেই ব্র্যান্ডিং করা যায়।
আলমের এক নং পঁচা সাবানের কথা মনে আছে? বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং ক্লাসে আলমের পঁচা সাবানের কেস স্টাডি করা হয়। আমার এক শিক্ষক আনিসুল ইসলাম বলেছিলেন নামকরণের যত নিয়ম-নীতি আছে আলমের এক নং পঁচা সাবান তার কোনো নীতিতেই পড়ে না, সব ক্রাইটেরিয়া ভেঙে ফেলেছে। তিনি অনেক কষ্টে আলম সাহেবের সাথে দেখা করে এর পেছনের কাহিনি জেনে ছিলেন, আমরা অন্য একদিন সেই কারণ জানব।
অনলাইন শপের নামকরণের ক্ষেত্রে একটা জিনিস মাথা রাখবেনই, আর সব নিয়ম নীতি চুলোয় গেলেও সমস্যা নেই। কয়েকদিন আগে আমার এক সাবেক কলিগ বললেন সিম্পলি একটা লোগো তৈরি করে দিতে (উল্লেখ্য আমি টাকার বিনিময়ে বা টাকা ছাড়া কোনোভাবে লোগো ডিজাইন করি না) হবে, নাম ফেয়ারি ফ্যাশন। বললাম নাম পাল্টান, তিনি পাল্টাবেন না। সার্চ দিয়ে দেখলাম এই নামে ডজনের বেশি পেজ আছে। কয়েকদিন পর আবার নক করলে লোগো রি-ডিজাইন করতে হবে, কারণ নাম পাল্টেছেন।
ব্যাপারটা হল আপনি এমন নাম নিয়েছেন যে নামে শত শত পেজ বা দেশে বিদেশে প্রতিষ্ঠান আছে, আপনি তার মধ্যে হারিয়ে যাবেন। এমন রাখতে হবে যে নামে আর কোনো শপ নেই। অনেক গ্রুপে পেজ মেনশন করা যায় না, শুধু নাম লিখে দিতে হয়, আগ্রহী ব্যক্তি যদি সেই নাম সার্চ দিয়ে অন্য পেজে ঢুকে যান আর আপনারটা খোঁজে না পান তবে শ্রম বৃথা যাবে। তাই নাম রাখার আগে দেখে নেবেন ওই নামে অন্য কোনো পেজ আছে কিনা, অন্তত দেশে আছে কিনা। ওই নামে ডোমেইন খালি আছে কিনা, এক সময় ব্যবসায় বড় হবে তখন ওয়েবসাইট তৈরি করতে হতে পারে।
টুইটার, ইন্সটাগ্রাম, পিন্টারেস্টে এই নামের বানানে ইউজারনেম খালি আছে কিনা দেখে নেবেন, মার্কেটিঙে জন্য এই মিডিয়াগুলোও গুরুত্বপূর্ণ। এমন নাম নিতে হবে যে নামে অন্য কেও নেই, ডোমেইন খালি, সোশ্যাল মিডিয়াগুলোতে খালি পাওয়া যাবে- এটাই হল নামকরণের মূল নীতি।
ধরা যাক নাম ঠিক করলেন “Hungry Noon”, দেখতে হবে facebook.com/hungrynoon , instagram.com/hungrynoon , pinterest.com/hungrynoon, twitter.com/hungrynoon এই ধরণের সোশ্যাল মিডিয়া ইউজার নেমগুলো খালি আছে কিনা। www.namecheckr.com -এ খুব সহজেই একসাথে ডোমেইন ও শীর্ষ সবগুলো সোশ্যাল মিডিয়া চেক করতে পারবেন।
হাকিমপুরি জর্দার কথা তো সবাই জানেন, সারা জীবন নিশ্চই ধারণা করে এসেছি হাকিমপুরে এই জর্দা তৈরি হয়। কিন্তু এটা কি জানেন হাকিমপুর নামে কেনো যায়গায় নেই? “হাকিমপুরি” নাম রাখার পেছনে একটাই কারণ এর যারা ক্রেতা তাদের জন্য এই নাম সহজ, সহজে বলতে পারে, সহজে মনে রাখতে পারে। এই সারল্য দিয়ে তিনি জর্দা ব্র্যান্ডিং করেছেন।
নেমচিপে খুঁজে দেখুন ডোমেইনটির মূল্য কত হবে:
Find a domain starting at $0.99
powered by Namecheap
তাহলে নাম রাখতে দুটো জিনিস মাথায় রাখবেন, নাম হবে অনন্য ও সহজ। পাশাপাশি আরেকটা জিনিস খেয়াল রাখতে হবে, নমটা সহজে মনে রাখা যায় কিনা। অনেক নাম পাবেন যার সাথে নাম বা ব্যবসায়ে কোনো সম্পর্ক নেই, যেমন এডোব, আলিবাবা, এ্যাপল, গোড্যাডি। আলিবাবা ও গোড্যাডি নাম রাখা হয়েছিল শুধু এই কারণে যে নামটা মাথায় গেথে যায়।
প্রচুর পেজ দেখি এ কালেকশন, বি কালেকশন, সি কালেকশন, অমুক বিডি, তমুক বিডি; এই নামগুলো মিলেমিশে এক ধরণের buzz সৃষ্টি করেছে, ভীরে মধ্যে নামগুলো হারিয়ে যায়।
ছোট ভাই রাসেল প্যান্ট পিস ও শার্ট পিসের অনলাইন শপের নাম রাখল “ফিশারম্যান“, আমাকে জিজ্ঞেস করল এই নাম দিয়ে কাপড় বিক্রি করা যায় কিনা, নাকি পাল্টাবে। নামটা এ্যাবস্ট্র্যাক্ট, একটা নির্দিষ্ট পেশার সাথে জড়িত হলেও এই নামে যে কোনো কিছু করা যায়। যদি “ফিশ শপ” হত তবে এই নাম দিয়ে শুধু মাছ বিক্রি করা যেত। ফিশারম্যান সবকিছু বেচতে পারবেন, যেমন রিচম্যান শুধু ধনী লোকদের কাছে বিক্রি করে না, আমার মত পুওরম্যানের কাছেও পোলো শার্ট বিক্রি করে।
নাম হোক unique, simple, memorable.