ব্যবসায়ের অনলাইন যাত্রায় কেন পেজ ও অন্যান্য অনলাইন মিডিয়ায় ব্যবসায়ের ঘরবসতি গড়ে তোলা দরকার সেটা নিয়ে একটা লেখা লেখব। আপাতত শুধু এটুকোই বলব শুধু প্রোফাইল থেকে বিভিন্ন গ্রুপে পোস্টিঙের মাধ্যমে ব্যবসায় পরিচলনা করে দৌড়াতে পারবেন, খুব আগাতে পারবেন না।
শুরু হোক ব্যবসায়ের অনলাইন যাত্রা
জিমেইল
প্রথমেই একটা জিমেইল খুলে ফেলুন, অবশ্য এর আগেই নাম ঠিক করে ফেলতে হবে। এটাই হল সবচে কঠিন কাজ, পরেরগুলো সব সহজ। পাসওয়ার্ড মনে রাখবেন, মোবাইল ও অন্য ইমেইল দিয়ে রিকভার করার অপশন রাখবেন। এটাই হবে আপনার সব অনলাইন একাউন্টের গোড়াঘর। জিমেইল একাউন্ট মানে গুগল একাউন্ট, এর মাধ্যমে আপনি গুগলের ড্রাইভ, ইউটিউব, keep, My Business সহ অসংখ্য টুলস পাবেন যা অনলাইন শপ মেইন্টেইনকে অকল্পনীয় রকমের সহজ করবে। অনলাইন শপের নামে জিমেইল খুললে ইমেইল যোগাযোগ সহজ হবে, ব্র্যান্ডিঙেরও সহায়ক।
ফেসবুক পেজ
বাংলাদেশে অনলাইন শপিঙের মাধ্যম হিসেবে ফেসবুক পেজ সবচে বেশি ব্যবহৃত হয়, ও সহজ। business.facebook.com এ একাউন্ট খুলুন, বুস্ট না করলেও এটা এনালিটিকস পাবার জন্য কাজের। পেজটাকে প্রফেশনালি সাজাতে হবে। প্রোফাইল পিকচারে লোগো, কভারফটো, এবাউট ডিসক্রিপশন, ইমেইল, মোবাইল নাম্বার যুক্ত করুন। কল অব একশন বাটনে গ্রুপ, বা কল বা মেসেজ সিস্টেম যুক্ত করুন। নিয়মিত পোস্ট করতে থাকুন, কিভাবে পোস্ট করলে মানুষকে আকৃষ্ট করা যায়, বিক্রেতা হিসেবে আস্থা অর্জন করা যায় এজন্য অনলাইনে একটু ঘাটাঘাটি করতে হবে। ব্যবসায় করতে চাইলে পড়তে হবে।
ফেসবুক পেজের রয়েছে শপ অপশন, যেটাকে আপনি ওয়েবসাইটের মত করে প্রোডাক্ট দিয়ে সাজাতে পারেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে এই ফেসবুক পেজই হবে আপনার অনলাইনে ব্যবসায় কেন্দ্র, বাকি সব সহায়ক ও প্রচারের জন্য যদিও অন্য সব মিডিয়া থেকেও চমৎকার বিক্রয় করা যায়।
ফেসবুক পেজ পরিচালনার জন্য আলাদা মোবাইল এ্যাপ আছে যার কথা অনেকেই জানে না, নাম Business Suite, আগে এর নাম ছিল পেজ ম্যানেজার।
ইন্সটাগ্রাম
এটা ফেসবুকেরই একটা শোশ্যাল মিডিয়া, পরিচয় করারনোর কিছু নেই। হয়তো এখন থেকে অনেক অর্ডার পাবেন না, তবু প্রচারের সুযোগ কেন ছাড়বেন।
পিন্টারেস্ট
পিন্টারেস্ট বাংলাদেশে নারীদের মধ্যে বেশি জনপ্রিয়। এটার বেলায়ও ইন্সটাগ্রামের মত। এখানে নিয়মিত আপডেট পোস্ট করে একটা অনুসারী গ্রুপ তৈরি করতে পারলে তাদেরও আপনার ব্যবসায় সমন্ধে আগ্রহী করে তুলতে পারেন।
টুইটার
টুইটার বাংলাদেশে মার্কেটিং বা নিশ মার্কেটিঙের জন্য এখনও কার্যকরী যায়গা নয়। জনসাধারণ স্তরে টুইটারের জনপ্রিয়তা কম, তারপরও টুইটারে একটাউন্ট খুলে পোস্ট করে যাওয়া ভাল। একটা বাড়তি যায়গায় উপস্থিতি থাকল, এবং ইউজারনেমটাও দখলে রইল।
ইউটিউব
বর্তমানে এটি খুব কার্যকরী ও গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র। কিন্তু উপরে এটি উল্লেখ করি নি কারণ অনেকের জন্য এখনও ইউটিউব চালানোর সহজ নয়। তবে গুরুত্ব দিয়ে এই কঠিন কাজটি করতে হবে। তথ্যবহুল ভিডিও পোস্ট করত হবে; ছবির মান, কথা বলার ধরণ এসবে পেশাদারিত্ব থাকতে হবে। ইউটিউবে খুব সহজে ক্রেতাকে কনভিন্স করা যায়। বর্তমানে অনেকে শুধু ইউটিউবের ভিডিও দেখে কেনাকাটা করেন।
হোয়াটসএ্যাপ বিজনেস
প্রায় সবাই হোয়াটসএ্যাপের নাম জানেন, এটির একটি বিজনেস ভার্শন আছে। আপনার ব্যক্তিগত মোবাইল ও ব্যবসায়ের মোবাইল নাম্বার আলাদা রাখবেন। ব্যবসায়ের মোবাইল নাম্বার দিয়ে হোয়াটসএ্যাপের বিজনেস ভার্শন ব্যবহার করবেন। এটিতে হোয়াটসএ্যাপের মত সহজকে কল করা, মেজেদ দেয়া, ভিডিও চ্যাট করা যায়, মানে হোয়াটস্যাপের সব ফিচারই আছে, বাড়তি আছে ব্যবসায়ের জন্য কিছু ফিচার। এর মাধমে খুব সহজে ক্রেতার সাথে যোগাযোগ রাখতে পারবেন, বিনা খরচে। অনেকে ফেসবুক নিয়মিত ব্যবহার করেন না, তাদের কাছে পৌঁছাতে হোয়াটস্যাপ কার্যকরী।
গুগল মাই বিজনেস
গুগল মাই বিজনেস হল গুগলে আপনার ব্যবসায়ের উপস্থিতি। এর সাহায্যে গুগল ম্যাপ, গুগল সার্চে সহজে আপনার ব্যবসায় দেখাবে। আগে এর জন্য আলাদা মোবাইল এ্যাপ ছিল, এখন এটা গুগল ম্যাপ এ্যাপের সাথে মিলিয়ে দেয়া হয়েছে। এই লিংক থেকে আপনার গুগল মাই বিজনেস একাউন্টস চালু করতে পারেন এবং কম্পিউটার থেকে খুব সহজে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন, তবে মোবাইলে কাজ করতে হলে গুগল ম্যাপ ব্যবহার করতে হবে।
মাই বিজনেসে আপনার পন্যের ছবি ও বিবরণ আপলোড করে প্রদর্শনের ব্যবস্থা আছে, ক্রেতার সাথে মেসেজ আদান প্রদান করা যায়। এটি এসইওর জন্য অতি দরকারী। যারা গুগল সার্চের মাধ্যমে পণ্য বা সেবা খোঁজেন তাদের কাছে পৌঁছাতে এর চে’ ভাল কিছু নেই।
এছাড়া লিংকডইনও হতে পারে প্রচারের দারুন মাধ্যম।
ওয়েবসাইট
এতোক্ষণ যা বললা তা শুধু বিনা খরচে অনলাইনে সরব হবার ও ব্যবসায় এগিয়ে নেবার পদ্ধতি। আর একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র আছে যার জন্য টাকা খরচ করতে হয়, এবং নিজের দক্ষতা না থাকলে লোক নিয়োগ করতে হয়, সেটি হল ওয়েবসাইট তৈরি করা।
তবে ছোট প্রতিষ্ঠান বা একক ব্যক্তির পরিচালিত প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রথমে ওয়েবসাইট তৈরি করার দরকার নেই। অনেককে দেখেছি ব্যবসায় চালু করার কিছু দিন পরে বা প্রাথমিক সাফল্য পাবার পরে যখন আরও বিনিয়োগ করার ক্ষমতা তৈরি হয় বা এই ব্যবসায়ে আরও খরচ করা যেতে পারে তখন ওয়েবসাইট তৈরি করেন। লাখ লাখ টাকায় যেমন ওয়েব সাইট তৈরি করা যায় আবার খুব কম খরচেও তৈরি করা যায়। কম খরচে তৈরি ও সহজে ব্যবহার, রক্ষাণাবেক্ষেণের সুযোগ করে দিয়েছে ওয়ার্ডপ্রেস।
এটা খুবই শিশুতোষ টিউটুরিয়াল, ব্যবসায়ের অনলাইন যাত্রা এখানেই শেষ নয়, আরও বহুপথ বাকি, বাকিটা আপনাকে নিজেকে খুঁজে নিতে হবে।